Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ব্রি উদ্ভাবিত ৫টি নতুন উফশী ধানের জাত

ব্রি উদ্ভাবিত ৫টি নতুন উফশী ধানের জাত
কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
অন্ধকারের অমানিশা থেকে ভোরের আভা পেরিয়ে, আমরা আজ উজ্জ্ব¡ল আলোর দিশায়। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আমরা আজ চালে উদ্বৃত্তের বাংলাদেশ। আর যাই হোক বাংলাদেশে এখন খাদ্যের কোন অভাব নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয়, জাপানের এক একর জমিতে তার তিনগুণ বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে ডাবল ফসল ফলাতে পারব না, দ্বিগুণ করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণ করতে পারি, তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না।” বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন আমাদের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করে চলেছে একের পর এক উচ্চফলনশীল ধানের জাত। এসব জাত কৃষি প্রযুক্তি ও সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি সহায়তার কারণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এমনকি বিশ্ব যখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত তখনও দেশে কোন খাদ্য ঘাটতি হয়নি। এই খাদ্য স্বয়ম্বরতার পেছনে যে সব প্রতিষ্ঠান সরাসরি কাজ করে তার অন্যতম ব্রি (বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট)। এই ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশে যাতে আর কখনোই খাদ্য সংকট না হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি জাতীয় বীজবোর্ড এর ১০৮তম ও ১০৯তম সভায় অনুমোদন পেল এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আরো পাঁচটি নতুন উফশী ধানের জাত। ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাত সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৩টি। আউশ, আমন ও বোরো ধানের এসব জাতের মধ্যে আছে- জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত, অল্প জিআই সম্পন্ন জাত, সরু ও সুগন্ধী ধানের জাত, ডায়বেটিক চালের জাত, হাইব্রিড জাত, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও ঠা-াসহিষ্ণু ধানের জাত, জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু এবং এন্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ধানের জাত। দেশের সকল শ্রেণির মানুষের পছন্দ অপছন্দ বিবেচনায় নিয়ে সকল অঞ্চল ও আবহাওয়ার উপযোগি জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি। জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮তম সভায় আমনের নতুন জাত ব্রি ধান১০৩, বোরো মৌসুমের বাসমতি টাইপ সুগন্ধি জাত ব্রি ধান১০৪ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৮ অনুমোদন করা হয়। সর্বশেষ গত ২রা মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় অনুমোদন করা হয় বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী কম (এষুংবসরপ ওহফবী) (জিআই) সম্পন্ন জাত ব্রি ধান১০৫ (ডায়াবেটিক ধান) ও রোপা আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান১০৬।
নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৩ : আমন মৌসুমের একটি জাত। ব্রি ধান২৯ এর সাথে ঋখ৩৭৮ নামে একটি সারির সংকরায়ণ এবং পরবর্তীতে এ্যন্থার কালচার পদ্ধতি (জীব প্রযুক্তি) ব্যবহার করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। এ জাতটির পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি.। ডিগ পাতা খাড়া। দানা লম্বা ও চিকন। ১০০০ পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.৭ গ্রাম। ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪%। এ জাতটির গড় জীবনকাল ১৩২ দিন। এ জাতটির গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.২ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৮.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
লম্বা ও চিকন চালের সুগন্ধি জাত ব্রি ধান১০৪ : ব্রি ধান১০৪ এর কৌলিক সারি বিআর৮৮৬২-২৯-১-৫-১-৩। কৌলিক সারিটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) তে ২০০৭ সালে আইআর৭৪০৫২-২১৭-৩-৩ এর সাথে বিআর৭১৫০-১১-৭-৪-২-১৬ এর সংকরায়ণ করে এবং পরবর্তীতে বংশানুক্রম সিলেকশনের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয় ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস সারিটি নির্বাচন করা হয় এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত সারিটি পাঁচ বছর ফলন পরীক্ষার পর ২০১৯ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অতঃপর ২০২১ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮তম সভায় ব্রি ধান১০৪ বোরো মৌসুমের উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন জাত হিসেবে ছাড়করণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
এ জাতে আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, পাতার রং সবুজ। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৯২ সেমি.। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। এ জাতের ধান বাসমতি টাইপের তীব্র সুগন্ধি যুক্ত। এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে এ জাতের জীবনকাল ব্রি ধান৫০ এর প্রায় সমান। এ ধানের গুণগত মান ভালো অর্থাৎ চালের আকার আকৃতি অতিরিক্ত লম্বা চিকন (ঊীঃৎধ খড়হম ঝষবহফবৎ) (৭.৫ মি.মি. লম্বা) এবং রং সাদা। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলে ব্রি ধান৫০ এর চেয়ে ব্রি ধান১০৪ এর ফলন প্রায় ১১.৩৩% বেশি পাওয়া গেছে। শীর্ষ ছয় স্থানে এটি ব্রি ধান৫০ এর চেয়ে ১৭.৯৪% বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতটি বাসমতি টাইপের ব্রির একমাত্র সুগন্ধি ধানের জাত। এ জাতের হেক্টরে গড় ফলন ৭.২৯ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৮.৭১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। ব্রি ধান১০৪ এ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। গাছের উচ্চতা ১১০-১১৫ সেমি.।
ডায়াবেটিক ধান ব্রি ধান১০৫ : নতুন উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ব্রি ধান১০৫ হল বোরো মৌসুমের একটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। ব্রি ধান১০৫ এর শনাক্তকারি বৈশিষ্ট্য হলো সবুজ পাতা, খাড়া ডিগপাতা, মাঝারি লম্বা ও চিকন দানা যার জিআই এর মান ৫৫.০। সুতরাং, কম জিআই হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসাবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে বলে আশা করা যায়। ব্রি ধান১০৫ এর ধান পাকার পরও এর গাছ সবুজ থাকে। এ জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সেমি.। গড় ফলন হেক্টরে ৭.৬ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি সরু ও রং সোনালি। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এই জাতের ১০০০টি ধানের দানার ওজন ১৯.৪ গ্রাম। ব্রি ধান১০৫ এর অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.০% এবং প্রেটিনের পরমিাণ ৭.৩%। রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু।
জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী ব্রি ধান১০৬ : আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চফলনশীল ধানের জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এ জাতের গাছের গোড়ায় ও ধানের দানার মাথায় বেগুনি রং বিদ্যমান। এর গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি.। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.৭৯ টন, যা অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৭ এর চেয়ে শতকরা ১৭.৪  বেশি। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০৬ এর ফলন হেক্টরপ্রতি ৫.৪৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। নতুন জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঢলে পড়া প্রতিরোধী। ফলে গাছ হেলে পড়ে না। ধানের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১১৭ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৪.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.২ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৮.৫। এই ধানের ভাত ঝরঝরে।
এ জাতের কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয়। পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০২০-২১ মৌসুমে দেশের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে আঞ্চলিক উপযোগিতা যাচাই করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১-২২ সালে কৌলিক সারিটি উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ এর গবেষণায় ঢলে পড়া প্রতিরোধী বলে বিবেচিত হওয়ায় ২০২২-২৩ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ৬টি অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক ফলন পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় কৌলিক সারিটি আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চফলনশীল আউশ ধানের জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে ছাড়করণ করা হয়।
১১ মে.টন ফলনের জাত ব্রি হাইব্রিড ধান৮ : বোরো মৌসুমের উচ্চফলনশীল জাত। জাতটির ক্রস নাম্বার বিআর২৮২২এইচ। গাছের উচ্চতা ১১০-১১৫ সেমি.। প্রতি গোছায় গড় কুশির সংখ্যা ১০-১২টি। দানার পুষ্টতা ৮৮.৬%। জীবনকাল ১৪৫-১৪৮ দিন। ফলন প্রতি হেক্টরে ১০.৫-১১ মে.টন। বোরো মৌসুমে বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রতি হেক্টরে ১.৮-২.২ মে.টন।
আগামী ২৩-২৪ অর্থবছর থেকে মাঠ পর্যায়ে এসব জাতের বীজ পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর এবং পিএইচডি ফেলো, কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, শেকৃবি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৬৫৪০৩৮০, মোবাইল :smmomin80@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon